বেশ কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা বলাবলি শুরু করেছিলেন যে, ডিমের কুসুমে থাকা কোলেস্টরেল এবং ফ্যাটি এসিড হৃদপিন্ডের নানা রোগের সাথে সম্পর্কিত। যার ফলে তারা বিশেষত হৃদরোগীদের ডিম ও ডিমের কুসুম খেতে নিরুৎসাহিত করতেন। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত বেশকিছু গবেষণা থেকে অন্যরকম তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্য অনুযায়ী তো আপনার জন্য ক্ষতিকর নয়ই, বরং নিয়মিত ডিম আপনাকে বেশ কিছু রোগ ব্যাধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
তো চলুন দেখে নেই একটি ডিমের কুসুমে কি কি ধরনের পুষ্টি গুনাগুন আছে, প্রতিদিন খাওয়া যাবে কিনা, নিয়মিত ডিমের কুসুম খেলে কি কি উপকার হবে ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর।
কুসুমের পুষ্টি গুণাগুণ
ডিম প্রচুর পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ একটি খাবার। যদিও এর অধিকাংশ পরিমাণ ফ্ল্যাট এবং ক্যালরি কুসুম এর মধ্যেই ছড়িয়ে থাকে, তবে ডিমের সাদা অংশেও প্রচুর প্রোটিন থাকে যা শরীরের কাজে লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী, একটি কাঁচা ডিমের কুসুমে নিম্নোক্ত পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছেঃ
- ৫৫ ক্যালরি
- ২.৭ গ্রাম প্রোটিন
- ৪.৫১ গ্রাম ফ্যাট
- ১৮৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল
- ০.৬১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ০.১ গ্রাম সুগার
এছাড়াও, ডিমের কুসুমে নানা ধরনের খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
- ক্যালসিয়াম
- জিংক
- আয়রন
- সোডিয়াম
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- ম্যাগনেসিয়াম
ডিমের কুসুম বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের খুব ভালো একটি উৎস। কুসুমের মধ্যে বিশেষত নিম্নোক্ত ভিটামিন উপাদানগুলো বিদ্যমান থাকেঃ
উপাদান | পরিমাণ |
থিয়ামিন | ০.০৩০ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.০৯০ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.০০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন b6 | ০.০৬০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি 12 | ০.৩৩০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৬৪.৮ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ডি ( D2 এবং D3) | ০.৯১৮ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.৪৩৯ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন কে | ০.১১৯ মাইক্রোগ্রাম |
সূত্রঃ মেডিকেল নিউজ টুডে
কেন ডিমের কুসুম খাওয়া উচিত?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ডিমের কুসুম এর ভেতর Phosvitin নামক একটি পুষ্টি উপাদান থাকে, যা কিনা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে আমাদের শরীর দ্রুত সেরে উঠতে পারে। এছাড়াও ডিমে কেরাটিন থাকে যা কিনা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
ডিমের মধ্যে থাকা সালফেটেড গ্লাইকো-পেপটাইড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি নিয়মিত স্বাস্থ্য চর্চার পাশাপাশি ডিম খাওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সহজ হবে এবং আপনি বেঁচে যাবেন নানা ধরনের হৃদরোগের ভয়াল থাবা থেকে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি
ডিমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রকারের ক্যারোটিনয়েড দৃষ্টিশক্তি উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত বয়স্ক মানুষদের চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিম থেকে পাওয়া ক্যারোটিনয়েড গুলো খুবই উপকারী।এছাড়াও চোখের পাশাপাশি টিমে থাকা প্রোটিনগুলো আপনার চুল, নখ, এবং ত্বকের সুস্বাস্থ্যের জন্যেও দরকারি
পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ
ডিমের কুসুমে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস আপনার দৈনন্দিন সুস্থতার জন্য খুবই দরকার। যদিও আমরা এতদিন শুনে এসেছি, ডিমের কুসুমে ঢাকা কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তবে সম্প্রতি নতুন গবেষণায় আমরা জানতে পেরেছি ডিমে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
কুসুম কি স্বাস্থ্যকর?
হ্যাঁ অবশ্যই। যদিও কিছুদিন আগ পর্যন্ত মনে করা হতো, কুসুমের মধ্যে থাকা কোলেস্টরেল এবং ফ্যাটি এসিড হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তবে সম্প্রতি পরিচালিত নতুন কিছু গবেষণায় অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। টাইম ম্যাগাজিনের বরাতে পাওয়া নতুন তথ্য অনুযায়ী, কুসুমে অবস্থিত কোলেস্টরেল এবং ফ্যাটি এসিডের সাথে হৃদরোগের কোন সম্পর্ক নেই। বরং ডিমের মধ্যে থাকা বেশ কিছু উপাদান স্ট্রোক জাতীয় রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
সুতরাং কুসুম স্বাস্থ্যকর কিনা, এ ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার সময় চলে এসেছে। সুস্বাদ, সহজলভ্যতা এবং অসামান্য পুষ্টিগুণের কারণে ডিম আমাদের খাদ্য তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। আর প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সুস্বাস্থ্যের পথে আরও একটি ধাপ।
প্রতিদিন খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ। ডিম প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অংশ হয়ে ওঠার মতো একটি খাবার। ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরে আপনার দৈনিক পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে ফেলে। তাই প্রতিদিনের আপনার খাদ্যতালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্ত করাটা একটা ভালো চয়েস। তবে অনেকেরই হাঁসের ডিমে এলার্জি থাকে, তাই খাবার সময় একটু সতর্ক থাকা ভালো। এছাড়া বাজারে কোয়েল পাখির ডিমও বেশ প্রচলিত। আপনি চাইলে প্রতিদিন একাধিক কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন।
তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, অথবা হৃদ রোগে ভুগছেন তাদের বেলায় একটু বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করাটাই শ্রেয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিদিন যাতে একটি ডিমের বেশি খাওয়া না হয়। হয়তো আপনি তিন-চারদিন পর একটা ৩ ডিমের ওমলেট খেলেন, সেক্ষেত্রে পরবর্তী কয়েক দিন আপনাকে একটু সংযত থাকতে হবে। এছাড়াও ডিম দিয়ে তৈরি করা খাবার, যেমন কেক পুডিং ইত্যাদি খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
শেষকথা
ডিম হচ্ছে প্রোটিন, ভিটামিন, আর খনিজ পদার্থের এক ছোট্ট পাওয়ার হাউস। আপনার মেটাবলিজম উন্নত করার পাশাপাশি হেলথি লাইফস্টাইল আর নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ডিম আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সুস্বাস্থ্যের দারগোড়ায়, যা কিনা আমাদের সবারই লক্ষ্য। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, আর সেই সুখের দিকে আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে একটি করে ডিম। তাই একটিহেলদি লাইফস্টাইল এর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন, আর সুস্থ থাকুন।